রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিতেই জামানত হারাচ্ছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। জামানত হারানো প্রার্থীদের তালিকায় বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তারা প্রাপ্ত (কাস্ট) ভোটের আট ভাগের এক ভাগও পাননি।তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি দলের মধ্যে তীব্র কোন্দল ও প্রার্থী মনোনয়নে বড় ভুলের কারণেই এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির এ চরম দশার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সাধারণ ও নতুন ভোটাররা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ আজ অবস্থান করায় ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের ভোটের মাধ্যমে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ায় সারাদেশে মহাজোটের বিপুল বিজয় হয়েছে।
সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগে জামানত হারানো হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান ওমর এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দীন আলম।
জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফলে জানা গেছে, বরিশাল জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রাপ্ত ফলাফলে নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৫ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও সংস্কারপন্থি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট। এ কারণে তিনি জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ শাহে আলম প্রাপ্ত ফলাফলে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ১১ হাজার ১৩৭ ভোট পাওয়ায় তিনিও জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু ৫৪ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবেদীন ৪৭ হাজার ২৮৭ ভোট পাওয়ায় তিনি জামানত হারাচ্ছেন না। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ ২ লাখ ৪১ হাজার ৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জেএম নুরুর রহমান ৯ হাজার ২৮২ ভোট পাওয়ায় তিনিও জামানত হারাচ্ছেন।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম ২ লাখ ১৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ৩১ হাজার ৩৬২ ভোট পাওয়ায় তিনিও জামানত পাচ্ছেন না। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবুল হোসেন খান মাত্র ১৩ হাজার ৬৫৮ ভোট পাওয়ায় তিনিও জামানত হারাচ্ছেন।
একইভাবে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএইচ হারুন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহজাহান ওমর পেয়েছেন ৬ হাজার ১৫১ ভোট। ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৭ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের জীবা আমিনা খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৮২ ভোট। এ কারণে দুটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। বরগুনা-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের মতিয়ার রহমান তালুকদার পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫০ ভোট। বরগুনা-২ (বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান রিমন ২ লাখ ৩২৫ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার মাহবুব হোসেন পেয়েছেন ৯ হাজার ৫১৮ ভোট। ফলে বরগুনা জেলার ওইদুটি আসনেই জামানত ফিরে পাচ্ছেন না বিএনপির দুই প্রার্থী।
পটুয়াখালী জেলার চারটি আসনেও বিএনপির কোনো প্রার্থী জামানত ফিরে পাচ্ছেন না। পটুয়াখালী-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহজাহান মিয়া ২ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৬৯ ভোট। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আ স ম ফিরোজ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের সালমা আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৬০ ভোট। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এসএম শাহজাদা সাজু ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের গোলাম মাওলা রনি পেয়েছেন ৬ হাজার ১৭৬ ভোট। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মুহিব্বুর রহমান মুহিব ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের এবিএম মোশারেফ হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ১৮৫ ভোট। চারটি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের চার প্রার্থী প্রাপ্ত (কাস্ট) ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পাওয়ায় তারা কেউ জামানত পাচ্ছেন না।
ভোলা-১ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তোফায়েল আহমেদ ২ লাখ ৪২ হাজার ১৭ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির গোলাম নবী আলমগীর পেয়েছেন ৭ হাজার ২২৪ ভোট। ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আলী আজম মুকুল ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের হাফিজ ইব্রাহিম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৯৯৯ ভোট। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ২ লাখ ৫০ হাজার ৪১১ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ২ হাজার ৫০২ ভোট। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ২ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের নাজিম উদ্দিন আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৭ ভোট পাওয়ায় বিএনপির প্রার্থীরা কেউ জামানত পাচ্ছেন না।
পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনেও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত হারাচ্ছেন। পিরোজপুর-১ (সদর-নেছারাবাদ-নাজিরপুর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শ ম রেজাউল করিম ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের জামায়াত নেতা শামীম সাঈদী পেয়েছেন ৯ হাজার ২৭১ ভোট।
পিরোজপুর-২ (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-জিয়ানগর) আসনে সাইকেল প্রতীক নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৪ ভোট। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মহাজোট -মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুস্তুম আলী ফরাজী ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের রুহুল আমিন দুলাল পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৯৮ ভোট। এ জেলার তিনটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জামানত পাচ্ছেন না।
Leave a Reply